হল জীবনের এক আনন্দময় দিন

User

শিক্ষার্থী , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

None


রেজী:
BCW24120001

প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫

 

 

"মাদারবক্স হল_২১৬ নং রুম: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪"

 

 

১৬ ডিসেম্বর ২০২৪। বাংলাদেশের অত্যন্ত আনন্দ এবং স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ স্মৃতি বিজড়িত দিন। আজকে পুরো ক্যাম্পাস সেজেছে নানান ধরনের সাজে। সব ডিপার্টমেন্টের ক্লাস বন্ধ। সকালে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে শহিদ মিনারে জাতির সূর্য সন্তানদের স্মৃতিতে সম্মান জানিয়ে পুষ্প অর্পণ করা তো শেষ হলো। কয়েকটি হলে এ উপলক্ষ্যে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।

মাদারবক্স হলের বন্ধু বোরহান, পাভেল এবং জুবায়ের, জোহা হলের বন্ধু কামরুল, বঙ্গবন্ধু হলের বুরহান উদ্দিন এবং আবু বকর ভাই, হবিবুর হলের বন্ধু শুভ্রদেব চাকমা, স্থানীয় বন্ধু তানিম, বিনোদপুরে মেসে থাকে বন্ধু মাহমুদ এবং মতিহার হল থেকে আমি ইউসুফ। হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে আমরা হাঁস রান্না করে খাবো। যেই কথা সেই কাজ। বন্ধু তানিম হাঁস রান্নার কথা শুনেই বাড়ি থেকে বাইক নিয়ে মতিহার হলে আমাকে পিক করে নিয়ে দুজনে মাদারবক্স হলের ২১৬ নং রুমে গেলাম এবং বোরহান ও জুবায়েরের সাথে বসে তৎক্ষনাৎ একটা বাজার লিস্ট করে ফেললাম। তারপর কয়েকজন মিলে টাকা দিলাম এবং তানিম, জুবায়ের ও আমি রাজশাহীর সুনামধন্য বাজার 'খরখরিয়া বাজার' এ গেলাম এবং অনেক দর কষাকষি করে ৮৫০ টাকায় প্রায় ২ কেজি ওজনের একটা চিনা হাঁস কিনলাম। সেখানেই আমি নিজে হাঁসটা জবাই করে প্যাকেট করে নিলাম। তারপর চাল, ডাল মশলা, সবজি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র সেই বাজারেই কিনে নিয়ে রুমে আসলাম। আসার পথেই বোরহানকে ফোন করে বলে দিলাম হাঁস পরিষ্কার করার জন্য পানি গরম করতে হবে, তাই সে যেন হিটারে ৫ লিটার পরিমাণ পানি গরম করতে দেয়।

কিন্তু এসে দেখি বোরহান এবং কামরুল বসে ফোন চালাচ্ছে আর দুষ্টামি করছে, পানি গরম করতে দেয়নি। এটা দেখে একটু রাগ করলাম আমরা। এরপর বোরহান রাইস কুকারে পানি গরম করতে দিলো আর এদিকে আমি, জুবায়ের, বোরহান এবং জুবায়েরের হবু শালা (জুবায়েরের গার্লফ্রেন্ডের ছোট ভাই, যে এবছর এডমিশন দেবে। রাজশাহীতে জুবায়েরের রুমে থেকে কোচিং করছে) একসাথে বসে পেঁয়াজ, মরিচ ও মশলা প্রস্তুত করতে লাগলাম। এসময় কামরুল বেডে বসে নানা ধরনের ফাজলামো করে চলেছে। কামরুল প্রচুর কথা বলে এবং বেশির ভাগ কথা ছন্দ মিলিয়ে কবিতার মতো করে বলে। আমরা কাজ করছিলাম আর কামরুল আমাদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছিলো। এর ফাঁকে জুবায়ের এক দৌড়ে নিচে নেমে গেল এবং এক বোল মুড়ি, চানাচুর নিয়ে এসে তেল, মরিচ, পেঁয়াজ দিয়ে মেখে দিলো। মুড়ি খাচ্ছি, কামরুলের সাথে ফাজলামো করে চলেছি এবং কাজও এগিয়ে নিচ্ছি।

এবার পানি গরম শেষ হলে কামরুল এবং আমি হাঁস নিয়ে গরম পানিতে চুবিয়ে রেখে ফাজলামো করে চলেছি।

কামরুল: এ ইউসুফ, দেখতো হাঁসটা বেটা না বেটি?
ইউসুফ: আমি তো চিনতে পারছি না। তুই চেক করে দেখ।
কামরুল: (লেজ ভাসিয়ে দেখে) এটা বেটা হাঁস। বেটা হাঁসের মাংসে স্বাদ হবে কিনা টেনশনে পড়ে গেলাম। না জানি হাঁসটা কত ঘাটের পানি খেয়েছে এ জীবনে...

এবার হাঁসের শরীর থেকে লোমগুলো তুলছি আর সমান তালে কামরুলের সাথে ফাজলামো করে চলেছি সবাই। আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে অন্যরাও সেটা উপভোগ করছে।

কামরুল: হাঁসে তো অনেক পাখা। তুলবো কেমনে?
ইউসুফ: বেটা হাঁস কেনা ভুল হয়ে গেছে। পাখনা বেশি। বেটা হাঁস, কাপড় খুলতে চাচ্ছে না, লজ্জা পাচ্ছে...

প্রায় ৪০ মিনিট সময় নিয়ে আমি এবং কামরুল হাঁস পরিষ্কার করলাম। এবার হাঁস পোড়াতে হবে। এজন্য হাঁস নিয়ে হল ক্যান্টিনের রান্নাঘরে গেলাম এবং সেখানে ক্যান্টিন ম্যানেজারের অনুমতি নিয়ে হাঁসটা পুড়িয়ে নিলাম। পোড়া হাঁস নিয়ে উপরে এসে পুনরায় কামরুল এবং আমি হাঁস কেটে পিস পিস করে নিলাম। কাটাকাটিতে পাভেল আমাদেরকে হেল্প করলো। এর মাঝে বোরহান এবং জুবায়ের রাইস কুকারে ভাত রান্না করতে দিয়েছে এবং হাঁস রান্নার চুলা প্রস্তুত করে দিয়েছে।

রান্নার দায়িত্বও আমার। বন্ধুদের মধ্যে আমি সেরা রাঁধুনি হিসেবে পরিচিত। জুবায়ের আমাকে রান্নায় হেল্প করছে। আমি নিজের মতো করে রান্না করতে শুরু করলাম কিন্তু হচ্ছে কোথায়?

এরই মাঝে উপস্থিত হলো শুভ্রদেব চাকমা।

শুভ্র: ইউসুফ, তুই একটু সরে দাঁড়া, আমি কয়েকটা ছবি তুলে নেই। ফেসবুকে পোস্ট করতে হবে আর আমাদের নোটিস গ্রুপে দিতে হবে। রান্না তুই করবি কিন্তু আমি কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে রান্নার ক্রেডিট নেবো।
ইউসুফ: আরে ভাই, মশলা পুড়ে যাচ্ছে, আর তুই আছিস ছবি তোলা নিয়ে। সর, আমাকে রান্না করতে দে।
শুভ্র: মশলা পুড়ে ছাই হলেও আমি ছবি তুলবো।

শুভ্রের দেখে বাকিরাও এলো ছবি তুলতে। আমি টুকটাক রান্না করে চলেছি আর ওরা ছবি তুলছে। ছবি তুলতে দেওয়ায় অসুবিধা হচ্ছিলো কিন্তু কোনো উপায় নাই। কেউই ছবি থেকে বঞ্চিত হতে চাচ্ছে না।

রান্না চলছে। খবর পেয়ে উক্ত বন্ধুরা সবাই একে একে উপস্থিত। মশলার গন্ধে হলের ২য় তলা ভরে গেছে। বন্ধুরা সবাই চুলার আশেপাশে ভিড় জমিয়েছে এবং চরম লেভেলের হাসি, ঠাট্টা-তামাশা চলছে।

 

biko

 

 

রান্না শেষ করতে প্রায় দুপুর ২টা বেজে গেছে। সবাইকে প্রচণ্ড খিদাও লেগেছে। তারাহুরো চলছে খাওয়া শুরু করতে।

এরই মাঝে এক ব্যাচ সিনিয়র বুরহান উদ্দিন ভাই এলেন এবং বললেন, তিনি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য একটা পরীক্ষা দিয়েছেন, সেটাতে পাস করে গেছেন। দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া তার জন্য কনফার্ম হয়ে যাচ্ছে। এই খুশিতে তিনি আমাদের সবাইকে মিষ্টি খাওয়ার বাজেট দিলেন। শুভ্র, তানিম এবং বুরহান ভাই বাজারে গেল মিষ্টি কিনতে। এদিকে জুবায়ের সবার প্লেটে ভাত, তরকারি দিয়ে রেখেছে। খাওয়ার জন্য সবাই অস্থির হয়ে গেছে।

শুরুর আগে কামরুল দুষ্টামি করে সবার জন্য মোনাজাতের ভঙ্গিতে দোয়া করে চলেছে -

কামরুল: আল্লাহ, আজকের এই আয়োজন কবুল করে নাও। ইউসুফ সুন্দর রান্না করেছে এজন্য তাকে একজন সুন্দরী বউ দাও...

এভাবে হাসি, ঠাট্টা, তামাশায় রুম ভরে গেছে। খাওয়া শেষে প্রায় ২০ মিনিট বসে আড্ডা দিলাম। তারপর সবার মনে হলো আগামীকাল ইনকোর্স পরীক্ষা আছে। তাই সবাই চলে এলাম। বোরহান এবং জুবায়েরকে সব পাতিল পরিষ্কার করতে বলে সেদিনের মতো সবাই একটা স্মৃতিময় দিনের যবনিকাপাত ঘটিয়ে আমরা যে যার হলে চলে গেলাম।

লেখায়:
মো: ইমরুল ইউসুফ
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
মতিহার হল