সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য—নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং অরুণাচল প্রদেশ—ভারতের ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলে প্রবেশ করতে হলে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন নেক নামে পরিচিত একটি সংকীর্ণ পথ অতিক্রম করতে হয়। শিলিগুড়ি করিডোরটি মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া এবং এটি ভৌগোলিকভাবে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এটি ভারতকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখে। এই করিডোরটি চারদিকে ভূটান, নেপাল, চীন এবং বাংলাদেশ দ্বারা বেষ্টিত।
সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোর মোট আয়তন ২,৫৫,৫১১ বর্গকিলোমিটার। এই সাতটি রাজ্য জাতিগত এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্যপূর্ণ হলেও রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে একটি অভিন্নতা রয়েছে। তাদের অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বৈচিত্র্যময় সামাজিক কাঠামোর কারণে এই রাজ্যগুলো ভৌগোলিক এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।এ অঞ্চলের ইতিহাসও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রাচীনকালে এই রাজ্যগুলো আজকের ভারতের অংশ ছিল না। আর্যরা সমগ্র ভারতবর্ষে বিস্তার লাভ করলেও, ব্রহ্মপুত্র নদীর পূর্বাংশে অবস্থিত এই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এ অঞ্চলগুলোতে গারো, খাসিয়া, বোড়ো, মিজোদের মতো অনার্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের রাজাদের শাসন ছিল।মিজোরাম এবং মণিপুর আসামের বরাক উপত্যকার মাধ্যমে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এই আন্তঃনির্ভরতা এবং সাংস্কৃতিক ঐক্যের কারণেই ১৯৭২ সালে এই সাতটি রাজ্যকে "সেভেন সিস্টার্স" নামে অভিহিত করা হয়। ত্রিপুরার সাংবাদিক জ্যোতি প্রসাদ সাইকিয়া প্রথম এই টার্মটি ব্যবহার করেন। এই রাজ্যগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের বৈচিত্র্য এবং ভূখণ্ডের সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।