ঠাকুরগাঁও জেলাটি রংপুর বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা, এটি আমাদের দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। আয়তনের দিক দিয়ে এ জেলাটি প্রায় ১৮০৯.৫২ বর্গ কি.মি। ঠাকুরগাঁও জেলাটির পশ্চিম দিকে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ(ভারত), পূর্বে অবস্থিত দিনাজপুর জেলা, দক্ষিণ দিকে অবস্থিত দিনাজপুর ও পশ্চিমবঙ্গ(ভারত), উত্তর দিকে রয়েছে পঞ্চগড় জেলা। এ জেলার প্রধান নদীর মধ্যে: টাংগন, নাগর, কুলিক, তিরনাই, পাথরাই; কাচনা বিল উল্লেখযোগ্য। খাদ্যশস্য গমের অধিক ফলনের কারণে ঠাকুরগাঁও-কে বাংলাদেশের রুটির ঝুড়ি বলা হয়। জনশ্রুতি আছে, জেলার টাঙ্গন নদীর তীরবর্তী একটি গ্রাম রাজা গোবিন্দ নারায়ন ঠাকুর তার প্রথম আস্তানা গড়ে তোলেন । ধর্ম চর্চার জন্য তিনি এখানে তৈরি করেন মন্দির ও বিভিন্ন ধর্মশালা। আর এ কারণেই পুরোহিত, সন্ন্যাসী, ও ঠাকুরদের পদভারে পূর্ণ হয়ে উঠে এ গ্রামটি। এছাড়াও অন্য আরেক ইতিহাস থেকে জানা যায়, জেলাশহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আচকা ইউনিয়ন ।
এ ইউনিয়নের একটি গ্রামে বাস করতেন নারায়ন ও সতিশ চক্রবর্তী নামের দুই জমিদার । তাদের বসতবাড়ী ঠাকুরবাড়ী নামে পরিচিত ছিল। ধারনা করা হয় ঠাকুরগ্রাম ও ঠাকুরবাড়ী এ দুটি নাম থেকেই ঠাকুরগাঁও নামের উৎপত্তি। ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের স্থানীয় জনগণ সাধারণত কোচ রাজবংশীয় ভাষায় কথা বলে। এ ভাষাটি মূলত রাজবংশী, রংপুরী বা কামতাপুরী নামে পরিচিত যা ইন্দো-আর্য পরিবারভুক্ত একটি ভাষা। শ্রুতিমধুর এ ভাষা বাংলাদেশের দিনাজপুর, রংপুর অঞ্চলের মানুষ ছাড়াও ভারতের কোচবিহারের মানুষের মুখেও ব্যাপক প্রচলিত। মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার ভুল্লি, গরেয়া ও সালন্দরে পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ঠাকুরগাঁও এর দর্শনীয় স্থান গুলো হলো: লোকায়ন জীবনবৈচিত্র্য যাদুঘর, জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ, বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপূরী আমগাছ, ফান সিটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, রাজভিটা, রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি, হরিপুর রাজবাড়ি, জগদল রাজবাড়ি, নেকমরদ মাজার, মহেশপুর মহালবাড়ি ও বিশবাঁশ মাজার ও মসজিদস্থল, শালবাড়ি ইমামবাড়া, সনগাঁ মসজিদ, ফতেহপুর মসজিদ, মেদিনী সাগর মসজিদ, গেদুড়া মসজিদ, গোরক্ষনাথ মন্দির এবং কূপ, হরিণমারী শিব মন্দির, গোবিন্দনগর মন্দির, ঢোলরহাট মন্দির, ভেমটিয়া শিবমন্দির, মালদুয়ার দুর্গ, গড়গ্রাম দুর্গ, বাংলা গড়, গড় ভবানীপুর, গড়খাঁড়ি, কোরমখান গড়, সাপটি বুরুজ ও অনেক পুরনো দিঘি। ঠাকুরগাঁও জেলায় রয়েছে দেশের সব চাইতে বড় আম গাছ । গাছটির নাম সূর্যপুরী আমগাছ । তিন একর জমি জুড়ে রয়েছে এ প্রকান্ড আমগাছটি। গাছটিতে এখনো আমের প্রচুর ফলন হয়। কয়েকটি বিশেষ খাবার ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে প্রচলিত আছে। ভাত, ডাল মাছ, মাংস ত খাবারের তালিকায় আছেই বাঙালির। কিন্তু ঠাকুরগাঁও এলাকায় পাটশাক ও লাফা শাকের ঝোল, সিদলের ভর্তা, চেং বা শাটি (টাকি) মাছের পোড়া বা সিদ্ধ ভর্তা, কচি কচু পাতার পোড়া বা সিদ্ধ ভর্তা, পেল্কা।