বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা

Ujjal babu Tanchangya

শিক্ষার্থী , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থী


রেজী:
BCW24120003

প্রকাশিত:
১১ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট:
১২ ডিসেম্বর ২০২৪

বন্ধুত্ব আটপৌরে, ভালোবাসা পোশাকী। বন্ধুত্বের আটপৌরে কাপড়ের দুই-এক জায়গায় ছেঁড়া থাকিলেও চলে, ঈষৎ ময়লা হইলেও হানি নাই, হাঁটুর নীচে না পৌঁছিলেও পরিতে বারণ নাই। গায়ে দিয়া আরাম পাইলেই হইল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চরণের মতো আমরা এমন বন্ধুকেই খুঁজি, যাহা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাপড়ের ন্যায় তুলনা করেছেন। বন্ধুত্ব কি জিনিস সেটা আমরা স্কুল কলেজ পার হতে না হতেই বুঝে উঠতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে হঠাৎ যেন একজন বন্ধুর খুঁজার তৎপরতায় পরে যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সঠিক বন্ধু পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ইরানের বিখ্যাত মনীষী শেখ সাদী (রহ.) উক্তিটি বারেবার মনে করিয়ে দেয় যে, "সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ "। নবীন হয়ে ক্যাম্পাসে পদচারণের পরপরই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে অহরহ। ক্যাম্পাসের আনাগোনা যেন ভরপুর হাজারো শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে - কেউ ক্লাব, গবেষণা, লেখালেখি, নাচ-গান, শিল্পকর্ম, দর্শন, প্রেম, চায়ের আড্ডা, খেলাধূলা, চাকরির চিন্তায় লাইব্রেরিতে রাত দিন কাটাচ্ছেন। আবার কারো কারো জীবনে প্রথমবার সিগারেটের চুমুক দেওয়ার সুযোগ হয়ে উঠে একজন বন্ধু দ্বারা। প্রথমবার চুমুক থেকে পরিণতি হয় কারো কারো ভয়ংকর নেশায়। রাতভর বন্ধুদের সাথে আড্ডা থেকে তাসের নেশা কাটিয়ে সকালে সিটি, প্রেজেন্টেশন, ক্লাসে যাওয়া হয়ে উঠে নিত্যদিনের রুটিন। পাশের রুমে একবার বিসিএসে ফেল করা ছেলেটি আবারো বিসিএসে অংশগ্রহণের জন্য বইয়ের নেশায় হাবুডুবু খাচ্ছে। ফেসবুক স্ক্রল করলেই দেখা মেলে চার বন্ধু একই সাথে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ডের স্কলারশিপ পেয়েছে। এসব দৃশ্য দেখা মাত্র কাহারো আফসোস আবার কাহারো সেটা অনুপ্রেরণা। নিজের চেনাজানা পরিচিত মুখগুলো যখন ভালো কর্পোরেট চাকরি, বিসিএস, ভালো ভালো সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে বিদেশে গমন করতে দেখলে নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়। আ্যরিস্টটল বদলেছেন, "যার আছে অনেক বন্ধু তার কোন বন্ধু নেই।" বন্ধু কম থাক তবে যে বন্ধুগুলো থাকবে তাঁরা যেন জীবনে অনুপ্রেরণা জোগাতে সহযোগিতা করে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রাখতেই আপনি খেয়াল করবেন আপনার কানে আসবে নানারকম উপদেশ। কেউ বলবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার না হতেই জীবনটাকে উপভোগ করা উচিত, কেউ আবার বিভিন্ন উৎস দেখিয়ে দিবে নিজেকে উন্নতি করার। বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে কিছুই দিবে না যদি না আপনি নিজের থেকে কিছু আদায় না করেন। একজন বন্ধু যদি বলে, বন্ধু চাকরি প্রিপারেশন নিই চল, গবেষণা করি, ক্লাবে যুক্ত হই, চায়ের আড্ডায় বিজ্ঞান -দর্শন -সংস্কৃতি-রাজনীতি, দেশ ও সমাজ নিয়ে কথোপকথন করি। আপনি যদি এসবে কান না দিয়ে আরেকজন বন্ধুর কথায় সারারাতভর তাসের নেশায় ঘুম হারাম করে নিজেকে ব্যাস্ত রাখেন তাহলে আপনি কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক সেটা নিজের থেকেই উপলব্ধি করতে পারবেন। কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, যদি থাকে বন্ধুর মন গাং পাড় হইতে কতক্ষন। জীবন নদীতে চলার পথে শৈশবে একধরনের বন্ধুত্ব তৈরি হয়, শিক্ষাজীবনে আরেক ধরনের। বলা হয়ে থাকে, শিক্ষার তিনটি ধাপের মধ্যে স্কুলজীবনের বন্ধুত্বই সেরা ছিল। যে সময়টাতে থাকে না স্বার্থপরতার লেশমাত্র। অন্যদিকে কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে দেখা যায় নানা রকমারিতে পরিপূর্ণ। একবিংশ শতাব্দীর আজকের যুগে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে হতে হচ্ছে অনেক বেশি সতর্ক।যান্ত্রিক সভ্যতার গ্যাঁড়াকলে পড়ে মনও হয়ে পড়ছে হতাশা, বিষণ্নতায় পিঞ্জরবন্দি পাখির মতো।এমন সময়ে একজন ভালো বন্ধু হতে পারে আপনার সহায়ক। যার দুই একটি কথায় জীবনে আপনাআপনি সাহস জোগাবে। বহু বছর পরও ‘তুই’ করে সম্বোধন করে যাপিত জীবনের কথা বলে ফেলা যায় এক নিঃশ্বাসে। ‘প্রকৃত বন্ধুত্ব’ এটাই। ক্যাম্পাস লাইফ শেষ করে যখন আবারো কোনো এক রজতজয়ন্তীতে দেখা মিলবে তখন মনে পড়বে একজন ভালো বন্ধুর সাথে চলাফেরা করে আজ আমি কোথায় অবস্থান করছি। একজন শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন তো এমনই হওয়া উচিত। খেয়াল করলে দেখা যায়, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একবার হলেও আত্মহত্যা করার জন্য চিন্তা করে। সেটা হতে পারে প্রেমিকার কারণে আবার সেটা চাকরি বাজারের কারণে। প্রেমিকার পাশাপাশি চাকরি বাজারের কারণে হতাশায় মগ্ন থাকা একজন শিক্ষার্থী একাকিত্বে দিনাতিপাতের সময় বন্ধুদের সাথে কোনো কাজ বা চায়ের আড্ডায় মগ্ন থাকতে পারে। কাউকে বন্ধু হিসাবে মনে স্থান দেওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন সে সব পরিস্থিতিতে আপনার পাশে থাকবে কি না। মানুষের জীবনে ভালো সময় যেমন আসে, তেমনি খারাপ সময়ও আসে। খারাপ সময়ে বন্ধু যদি আপনার কাঁধে একটু হাত রাখে বা ভালো পরামর্শ দেয় তবে বিপদ কাটিয়ে ওঠা অনেক সহজ হয়ে যায়। বন্ধু যদি আপনার বিপদে সাহায্য না করে, তবে মনে রাখবেন সে আদৌ আপনার বন্ধু ছিল না। বন্ধু নির্বাচনে সতর্কবার্তা অবলম্বন করুন। ক্যাম্পাস লাইফ চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে কর্মজীবনের হাতিয়ার হোক সুন্দর ও সাবলীল।তাই আজই নিজেকে প্রতিশ্রুতি দিন কার সাথে চলাফেরা করবেন, কোনটা গ্রহণ করবেন আর কোনটা বর্জন করবেন।