আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার

Mohammad Eyasin

শিক্ষার্থী , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

None


রেজী:
BCW24120002

প্রকাশিত:
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট:
১১ ডিসেম্বর ২০২৪

আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। দিন থেকে দিন পরিবর্তন হচ্ছে সভ্যতা। পৃথিবী এবং মানুষের পরিবর্তনের গতি সমানতালে তাল মিলিয়ে চলছে। উন্নত হচ্ছে প্রযুক্তি। উন্নত হচ্ছে সমাজ সভ্যতা। কয়েক দশক আগে মানুষ যা চিন্তা করতে পারতো না বর্তমানে তা মানুষের হাতের নাগালে। পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। সামাজিক যোগাযোগের জন্য রয়েছে ফেসবুক,টুইটার, ভাইবার,ইউটিউব, ইমো,ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদি মাধ্যম। বিনোদনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন সফটওয়্যার, নানা রকম গেইমিং অ্যাপ। এছাড়াও রয়েছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সিস্টেম। শিক্ষামূলক বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে অনলাইন ভিত্তিক ই-পেপার,ই-বুক, ই-লার্নিং,ই-মার্কেট। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ই-সেবা রয়েছে যা আমাদেরকে অগ্রগতির চূড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। জীবনকে করছে সহজ ও সময়সাপেক্ষ। এমনকি বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (artificial intelligence) ব্যবহার করে মানুষের কাজ করছে রোবট। গত কয়েকদিন আগে ভারতের উড়িষ্যায় লিসা নামে নিউজ রিপোর্টার নিউজ টেলিকাস্ট করছিল যে ছিল রোবট। মানুষ প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। আরও সহজভাবে বলা যায় প্রযুক্তি অক্সিজেনের মতো মানুষের শিরা-উপশিরায় মিশে আছে। বিন্দুমাত্র রক্ত চলাচলের ত্রুটিতে মৃত্যু নিশ্চিত। জীবন - প্রযুক্তি -আধুনিকতা এই তিনটি বিষয় একই সূত্রে গাথা। জীবনের পরিবর্তনে প্রযুক্তির উন্নতিতে আধুনিকতা চলমান। আধুনিকতার যাদু দিয়ে গোটা বিশ্বের সাথে খেলা করছি প্রতিনিয়ত। ঘরে বসেই যোগাযোগ করছি কানাডা,আমেরিকা, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে।এখন আর ব্যবসা- বানিজ্যের জন্য অফিসে যেতে হয় না, শিক্ষা অর্জনের জন্য যেতে হয় না শিক্ষা-অঙ্গনে, খেলাধুলার জন্য ছেলেমেয়েরা পড়ন্ত বিকেলে মাঠে যায় না,রান্না শিখার জন্য মায়ের কাছে রায়না ধরতে হয় না, চিঠি পৌঁছানোর জন্য রানারের প্রয়োজন হয় না। ঘরে বসেই সব শিখা যায় ইন্টারনেট নামক জাদুর বাক্স ব্যবহার করে। উন্নত প্রযুক্তি আমাদের যা দিচ্ছে তার চেয়ে বেশি কেড়ে নিচ্ছে।আমি এটা বলছি না যে আমাদের উন্নত প্রযুক্তি বা আধুনিকতার দরকার নেই। অবশ্যই দরকার আছে। দরকার আছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের। আধুনিকতা মানে কী গেইম খেলতে খেলতে মৃত্যু বরণ করা? আধুনিকতা মানে কী মেসেঞ্জারে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া? পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো? স্ব ধর্মীয় অনুশাসন ভুলে গিয়ে অপ-সংস্কৃতি চর্চা করা? কিছুদিন আগে ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার পথে আমার পাশের সিটে বসে একজন RAB অফিসারের ছেলে ফোনে ফুটবল গেইম খেলছিল।এমন অবস্থায় ফোন কল আসল।সে গেইমে এতটাই আসক্ত ছিল যে তার বাবাকে ফোন কল রিসিভ করার জন্য দিল না। কিন্ত কিছুদিন আগেও আমাদের সোনার ছেলেরা এ রকম রয়লার মুরগির মতো ছিল না। বিকাল হলেই মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, বাস্কেটবল, কাবাডি ইত্যাদির চর্চা হতো। বর্তমানে মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করে এমন খেলোয়াড়দের সংখ্যা ব্যষ্টিক হয়ে দাড়িয়েছে। শারীরিক-মানসিক ফিটনেস, কর্মদক্ষতা ও সুস্বাস্থ্যের জন্য খেলাধুলার বিকল্প নেই। শিক্ষা অঙ্গনে শিক্ষকদের বচন ছাত্রদের কাছে এখন আর শ্রুতিমধুর লাগে না। কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে অজানা থাকলে জানার জন্য এখন আর শিক্ষককে প্রশ্ন করে না। কারন বাসায় গিয়ে অনলাইন বা গুগল থেকে শিখে নিবে। এভাবে যদি শিক্ষা অর্জন করা যেত তাহলে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা শিক্ষার পিছনে খরচ করতো না। আমরা দিন দিন এই অদৃশ্য হাতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। যেটা আমাদেরকে নতুন কিছু করার, নতুন কিছু ভাবার, নতুন কিছু উদ্বোধন করা থেকে দমিয়ে রাখছে। নিজে থেকে নতুন কিছু আবিস্কারের সজীব সত্তাকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে এই অদৃশ্য হাত। কয়েক দশক আগেও প্রযুক্তি ব্যবহার ছিল না জন্ম নিয়েছে মুকুন্দরাম, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর,বিদ্যাপতি, চন্ডীদাস, আলাওল, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথের মতো বিখ্যাত ব্যক্তি। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিনকে দিন চোর,ডাকাত,ধর্ষক,ছিনতাইকারী, হ্যাকার,চাঁদাবাজের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এমনকি মুঠোফোন ভিত্তিক সেবা নগত,বিকাশ থেকে ভোক্তারা হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। মানুষ ভুল করবে এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহন করে জীবনের প্রতিটি স্তরে কাজে লাগাবে।কখন মানুষ ভুল থেকে শিক্ষা অর্জন করবে? যখন মানুষ ওই অদৃশ্য হাত নামক জাদুর বাক্স থেকে বেড়িয়ে আসবে এবং পরনির্ভরশীলতা বোধ পরিহার করে আত্নসত্তা জাগিয়ে তুলবে। কারন কোন একটা জিনিস আগে থেকে তৈরি করা আর নিজে তৈরি কারার মধ্যে আকাশ-জমিন পার্থক্য রয়েছে। তাই আমদের উচিত প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহন করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করা।