আমার জীবনের সংগ্রামের গল্প

Borsha Rani Mohonto

শিক্ষার্থী , Dhaka University

BBA


রেজী:
BCW24110002

প্রকাশিত:
২৩ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট:
০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আমি ছোট শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মেয়ে।পড়াশোনা বরাবরই আমার অনেক পছন্দের।ছোট থেকেই শিক্ষকরা বলতো আমার দ্বারা ভালো কিছু হবে।সবসময় অনুপ্রাণিত করতো।পরিবারের অর্থাভাবে স্বনামধন্য কোনো স্কুলে পড়ার সুযোগ পাইনি।এলাকার স্কুলেই পড়েছি।প্রাইমারি স্কুলের ম্যামরা নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করতো,ভালোবাসতো।হাইস্কুলেেও সেরকম পরিবেশই পেয়েছি।পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে শিক্ষকরা সবসময় সাহায্য করেছেন।অর্ধেক বেতনে পড়া,বিনা বেতনে পড়া,উপবৃত্তি এগুলো ছিলো আমার পরিশ্রমের ফল।ক্লাস নাইনে কমার্স নেওয়ার পর শুরু হলো আরেক সংগ্রাম।কমার্স নিয়েও কিছু করা যায় তা প্রমাণ করার সংগ্রাম।পরিশ্রমের ফলস্বরূপ নওগাঁর সেরা কলেজে চান্স পেলাম(নওগাঁর বাইরের কোনো কলেজে পড়ানোর মতো আর্থিক অবস্থা ছিলো না আমার পরিবারের) ফাস্ট ইয়ার পুরোটাই করোনার কারণে বাসায় বসেই কাটলো।এসময়টায় আরো বেশি করে উপলব্ধি করলাম যে আমার কিছু একটা করতেই হবে।"লোকের কথা" আমাদের ভেতর থেকে শক্ত বানায়।যাইহোক,এরপর সেকেন্ড ইয়ারে পুরোদমে শুরু করলাম পড়াশোনা।নিয়মিত কলেজে যেতাম।সব ক্লাস করতাম।তাই কলেজ শিক্ষকদেরও পরিচিত মুখ ছিলাম।তারাই প্রথম আমায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখায়। তাদের অবদান অনস্বীকার্য।টিউশনের টাকায় খরচ চালাতাম।টেস্ট পরিক্ষায় প্রথম হলাম।কোচিং-এ অর্ধেক কোর্স ফি দিয়ে পড়ার সুযোগ পেলাম। পড়াশুনা নেশায় পরিণত হয়ে গেলো।ঈদের মধ্যেও পড়তে গিয়েছি স্যারের কাছে।এইচএসসি তে গোল্ডেন এ+ আসলো।পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা দেখে অ্যাডমিশনেও বিনাখরচে পড়ার সুযোগ পেলাম।আমার পরিবারের কেউ(মেয়ে তো দূরের কথা)আগে পাবলিকে পড়ে নাই।আমি মেয়ে হয়ে বাড়ি থেকে দূরে অন্য শহরে থাকবো,পড়বো এটা আমার পরিবারের কল্পনার বাইরে।এলাকার লোকের কত কথা!অনেক কষ্টে পরিবারকে বুঝিয়ে রাজি করলাম।সবমিলিয়ে রাজশাহী পর্যন্ত যেতে পারাই ছিল সে সময়ের সেরা পাওয়া।যখন থেকে বুঝতে শিখলাম পাবলিক ভার্সিটি সম্পর্কে তখন থেকেই টার্গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ঢাবিতে চান্স পাওয়ার পরেই প্রথম আসবো নইলে কখনোই আসবো না।কমার্স নিয়েও ভালো জায়গায় ভালো কিছু করা যায় তা প্রমান করার এটাই ছিল আমার জানা সেরা উপায়।সেবার গ ইউনিটে প্রতিযোগী ছিলো ৪১,৩৬৮ জন।সংখ্যাটা কখনো ভুলবো না৷আর তার বিপরীতে কোটাছাড়া সিট ছিলো ৯৬৬ টি।নিজেকে এর মধ্যে চিন্তা করতে পারিনি কখনো কিন্তুু চেষ্টা করেছি সবটা দিয়ে।ঢাবির আগে রাবির রেজাল্ট দিলো।নিজেকে রাবিয়ান বলতে পারবো দেখে অনেক ভালো লাগছিলো।তারপর চবিতে হলো,গুচ্ছেও হলো৷কিন্তু মন তো পড়ে আছে স্বপ্নে দেখা ঢাবিতে।৮ জুন দুপুর ১ টার পরে কোচিংয়ের এক ভাইয়া আমার রেজাল্ট বের করে পাঠালো।সাথে লিখা Congratulations। আমি কিছু বোঝার অবস্থায় ছিলাম না।বুকের ভেতর কেমন জানি করছিলো৷এখন লিখতেও আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।যাইহোক,রেজাল্ট আমার বিশ্বাস না হওয়ায় তাকে আর একবার সব সঠিক তথ্য দিয়ে দেখতে বললাম। আবার সেই রেজাল্টই পাঠালো৷১০ বারেরও বেশি রেজাল্ট চেক করার পরেও দেখি আমি নাকি ৩০৩ তম হইছি।অন্যরা বিশ্বাস করলেও আমি কেন জানি নিজেকে মানাতেই পারছিলাম না।মানে সত্যি আমি!! এখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Management Studies বিভাগে পড়াশোনা করছি৷এখনোও মাঝে মধ্যে মনে হয় আচ্ছা আমি কি সত্যিই ঢাবিয়ান! জানি আমি বিশ্বজয় করে ফেলিনি কিন্তু আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের জন্য এ অনেক বড় পাওয়া।আমার এ পথে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার মায়ের।পরিবার এখন আমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখে।এখন দায়িত্ব অনেক বেশি।এ পথে যারা পাশে ছিলো তাদের জন্য কিছু করতেই হবে নইলে অন্যায় হবে।অর্থাভাবে আমার যে ভাইয়ের পড়াশোনা বন্ধ হয়েছে তার স্বপ্নও আমাকেই পূরণ করতে হবে।মা বাবার সামনে যখন কেউ ঢাবিয়ান হিসেবে আমার গুরুত্ব তুলে ধরে তখন তাদের মুখের হাসি যে কি সুন্দর লাগে তা বলে বোঝাতে পারবো না। দিনশেষে অর্জনের খাতায় আমার পরিচয় দিতে পারি আমি গর্বিত ঢাবিয়ান ❤️