ভালোবাসার রং কেমন বলুন তো? ভালোবাসার সংজ্ঞাই বা কি? গল্প,উপন্যাস,নাটক বিভিন্ন জায়গায় বারংবার বর্ণনা করা হয়েছে এই বিষয়টি নিয়ে। শুধু তাই নয় কবিতা আর উপন্যাসের সংমিশ্রণেও ভালোবাসার সংজ্ঞার অনুসন্ধান আমরা পেতে পারি সাহিত্য জগতে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষের কবিতা' উপন্যাসটিতে হয়তো উত্তর পেলেও পাওয়া যেতে পারে। প্রচলিত এবং একদম সত্য একটি কথা হলো,"আমরা সবসময় ভুল মানুষের প্রেমে পড়ি।" কাছে থাকা মানুষকে মূল্য না দিয়ে অবহেলায় হারিয়ে ফেলি।এই যে 'শেষের কবিতা' উপন্যাসেও নায়িকা লাবণ্য,সে চাইলেই শোভন লালের সাথে সুখের ঘর বাঁধতে পারতো সহজেই।কিন্তু ঐ যে ভাগ্যের লিখন! উপন্যাসের গল্পটা শুরু নায়ক অমিতকে দিয়েই।
ব্যারিস্টার অমিত ,অমিতকে নিয়ে নারীদের প্রবল উৎসাহ,কিন্তু অমিতের আগ্রহ সেরকমভাবে একেবারেই নেই ।সবকিছু উপেক্ষা করে শিলঙ পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েই সাক্ষাত লাবণ্যময়ী লাবণ্যের সঙ্গে!দুজনেই বেশ সাহিত্যপ্রেমী।তাই তাদের মনে সাহিত্যের রস প্রেমের রসে রূপান্তরিত হবে -এটা বলতে গেলে স্বাভাবিক বিষয়।প্রেম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে,তখনই কেতকির সাথে অমিতের আংটিবদলের মতো বিস্ফোরক ঘটনা প্রকাশ পায় লাবণ্যের কাছে!এই আংটি বদল নাকি লাবণ্যের সঙ্গে দেখা হওয়ার অনেক আগেই করেছিল অমিত।এ যেন ত্রিমুখী প্রেমচিত্র। প্রেম,অভিমান,বিরহ সব পিছনে ফেলে জীবনকে নিয়তির কাছে সপার্দ করে তারা।অমিত বিয়ে করে কেতকিকে।
আর লাবণ্য শোভনলালকে।আপাতদৃষ্টিতে হয়তো দুটো মানুষের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে,তবে মৃত্যু হয়েছে দুটি মনের।জীবনে কোনো এক মোড়ে অমিত কেতকির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকলেও প্রেমে পড়ে যায় লাবণ্যের! তাইতো প্রশ্ন রয়েই গেল,"আসলেই কি পরিস্হিতি বিচারে ভালবাসার রং পাল্টায়?ভালবাসার মানুষ কি পরিবর্তন করা যায় ?" নাকি পরিবর্তন করতে বাধ্য হতে হয়? সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "শেষের কবিতা"উপন্যাসটি পাঠ করার বিকল্প দেখি না ।