মাওলানা জালাল উদ্দিন রূমী (রহঃ) ১৩০০ সালের দিকে বর্তমান আফগানিস্তানের বালখ অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম মাওলানা মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন রূমী, তবে তিনি সাধারণভাবে রূমী নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন এক মহান সুফি ধর্মগুরু, কবি, দার্শনিক এবং আইনজ্ঞ। রূমী ছিলেন তৎকালীন পারস্যের বিখ্যাত তত্ত্বজ্ঞানী এবং সুফি অর্ডার 'মাওলানা' র ঐতিহ্যবাহী শাখার প্রধান। তাঁর শিক্ষা ও শৈশবকালিক জীবন কাটে বাগদাদ, কায়রো, দামেস্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী শহরে। তিনি নিকটবর্তী শহর কুনিয়া (বর্তমান তুরস্ক) থেকে তার শিক্ষাজীবন শেষ করেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন।
রূমী তাঁর জীবনযাত্রা ও চিন্তাধারা ভিত্তি করে একটি বিপ্লবী ধর্মীয় দর্শন তৈরি করেন, যা মূলত প্রেম, ঐক্য ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের ওপর জোর দেয়। তাঁর অন্যতম প্রধান শিষ্য শামস তিবরিজী ছিলেন, যাঁর সংস্পর্শে এসে রূমী তাঁর কবিতায় গভীরতা এবং দ্যুতি আনেন। রূমী তাঁর জীবনে অসংখ্য কবিতা রচনা করেন, যা "দিবান-ই-শামস" এবং "মসনবি" নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থে সংকলিত। তাঁর কবিতাগুলি সারা বিশ্বে অনূদিত হয়েছে এবং বহু সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে।
রূমী ১২৭৩ সালে কুনিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন, তবে তাঁর অবদান আজও বিশ্বের নানা প্রান্তে গভীরভাবে অনুধাবিত হয়। তিনি মানবিক সম্পর্ক, ধর্মীয় ঐক্য ও আধ্যাত্মিক প্রেমের যে মহান মন্ত্র প্রচার করেছেন, তা যুগযুগ ধরে মানুষের মনে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে আসছে। তাঁর দর্শন, কবিতা এবং শিষ্যদের মাধ্যমে তিনি মানবতার এক মূর্ত প্রতীক হয়ে রয়েছেন।