হাশেম খান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এবং শিল্পকর্মে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি সুপরিচিত। তিনি ১৯৪১ সালে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে শিল্পের প্রতি গভীর আগ্রহ ও প্রতিভা দেখা যায়। শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। সেখান থেকে তিনি চিত্রকলার বিভিন্ন ধারা ও কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন এবং নিজেকে একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
হাশেম খানের কর্মজীবন অত্যন্ত বর্ণাঢ্য এবং সৃষ্টিশীলতায় ভরপুর। তিনি শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন, তবে তাঁর প্রধান ক্ষেত্র ছিল চিত্রকলা। তাঁর আঁকা চিত্রে বাংলার প্রকৃতি, মানুষের জীবনযাত্রা, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর শিল্পকর্মে দেশপ্রেম এবং সমাজ সচেতনতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম তাঁর শিল্পকর্মে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
হাশেম খানের চিত্রকর্ম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৮৪ সালে তিনি একুশে পদক, ২০১১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর শিল্পকর্ম বিভিন্ন গ্যালারি এবং প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে, যা তাঁকে একটি বিশেষ স্থান এনে দিয়েছে। তিনি তাঁর সৃষ্টিশীলতা এবং প্রতিভার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন।
২০১৫ সালে হাশেম খান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তবে তাঁর অসামান্য শিল্পকর্ম এবং সৃষ্টিশীলতা আজও বাংলার মানুষের হৃদয়ে জীবিত রয়েছে। তাঁর শিল্পকর্ম এবং দেশপ্রেমের আদর্শ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। হাশেম খান ছিলেন একজন প্রকৃত শিল্পী, যিনি তাঁর চিত্রকলার মাধ্যমে বাঙালি জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে চিরস্থায়ী রূপ দিয়েছেন। তাঁর অবদান ও কৃতিত্ব চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।