ড. অনিরুদ্ধ রায় একজন বিশিষ্ট বাঙালি লেখক, অধ্যাপক ও গবেষক হিসেবে সুপরিচিত। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার একটি শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি বিশেষ কৃতিত্বের সাথে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন।
ড. রায় তার কর্মজীবন শুরু করেন কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়ানোর মাধ্যমে। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং সেখানেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে অধ্যাপনা করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের মধ্যে অত্যন্ত সম্মানিত ছিলেন।
তিনি লেখালেখি শুরু করেন ছাত্রজীবন থেকেই। তার প্রথম গ্রন্থ "নিবেদন" প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে। এই গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্য জগতে তাকে একজন শক্তিশালী লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তার সাহিত্যকর্মের মধ্যে উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ এবং গবেষণামূলক গ্রন্থ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। "অশান্ত ঘর" এবং "অগ্নিযুগের কবিতা" তার অন্যতম বিখ্যাত গ্রন্থ। তার লেখনীতে সমাজের নানা সমস্যার প্রতিফলন এবং তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে।
ড. রায়ের গবেষণা কর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছে এবং তার গবেষণা প্রবন্ধগুলি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ও আধুনিক সাহিত্য সম্পর্কে তার লেখা প্রবন্ধগুলি আজও গবেষকদের মধ্যে প্রাসঙ্গিক।
তার অসামান্য কৃতিত্বের জন্য ড. অনিরুদ্ধ রায় বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছেন।
ড. রায় ২০১০ সালের ২৫শে অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগতে একটি অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তবে তার সাহিত্যকর্ম এবং গবেষণা আজও পাঠকদের মধ্যে জীবন্ত এবং প্রাসঙ্গিক। তার অনন্য লেখনী এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে এবং ভবিষ্যতেও অনুপ্রেরণা যোগাবে।