কাজী আবদুল ওদুদ (১৮৯৪- ১৯৭০) শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ। জন্ম ১৮৯৪ সালের ২৬ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার পাংশা উপজেলার বাগমারা গ্রামে। পিতা কাজী সৈয়দ হোসেন। তিনি পেশায় ছিলেন রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার। মাতা খোদেজা খাতুন।
কাজী আবদুল ওদুদ ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯১৩ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি ১৯১৫ সালে আই-এ এবং ১৯১৭ সালে বি এ পাস করেন। ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পলিটিক্যাল ইকোনমিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এমএ পাস করার অব্যবহিত পরেই তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।
কলেজে অধ্যয়নকালেই কাজী আবদুল ওদুদ সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। ছাত্র অবস্থায়ই তাঁর একটি গল্পগ্রন্থ মীর পরিবার (১৯১৮) এবং উপন্যাস নদীবক্ষে (১৯১৯) প্রকাশিত হয়। এমএ পাস করার পর তিনি কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে অবস্থিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির আবাসিক ভবনে কিছুদিন অবস্থান করেন। কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে এখানেই। কাজী আবদুল ওদুদের লেখক জীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে এ কবি-সাহিত্যিকদের সাহচর্যেই।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারায় কাজী আবদুল ওদুদের প্রধান পরিচয় চিন্তাশীল লেখক হিসেবে। তবে তাঁর লেখালেখি শুরু হয় কথাসাহিত্যের মাধ্যমে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ মীর পরিবার পাঁচটি গল্পের সংকলন। এরপর তিনি তিনটি গল্প রচনা করেন যা পরবর্তী সময়ে তরুণ (১৯৪৮) গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। নদীবক্ষে ও আজাদ (১৯৪৮) তাঁর দু’টি উপন্যাস। নাটকও রচনা করেন দু’টি, পথ ও বিপথ (১৯৩৯) এবং মানব-বন্ধু (১৯৪১)। মানব-বন্ধু পরবর্তীকালে তরুণ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয় কাজী আবদুল ওদুদের ব্যবহারিক শব্দকোষ। আধুনিক বাংলা ভাষার একটি জনপ্রিয় অভিধান সংকলনে তাঁর ভাষা সচেতন মনের পরিচয় মেলে এখানে। অভিধানটির বিশেষত্ব হলো, এতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আরবি, ফার্সি ও তুর্কি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণের প্রয়াস আছে এবং বাঙালি মুসলমান সমাজে প্রচলিত শব্দসমূহ অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে।