মো. ইকরাম একজন বিশিষ্ট বাঙালি লেখক ও সমাজসেবী ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৯২৮ সালের ১৫ জানুয়ারি, বাংলাদেশের রাজশাহী জেলায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি লেখালেখির প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর, রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ইকরামের লেখালেখির জীবন শুরু হয় তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। তাঁর প্রথম গল্প সংকলন "প্রথম কদম" প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে এবং এটি পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তাঁর লেখায় গ্রামবাংলার জীবনচিত্র, সামাজিক অসঙ্গতি এবং মানুষের মনস্তত্ত্ব অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। ইকরামের প্রধান সাহিত্যকর্মগুলির মধ্যে রয়েছে "মেঘের ছায়া", "অন্তর্দ্বন্দ্ব", "রোদ-বৃষ্টি", এবং "পদ্মার ঢেউ"।
ইকরাম তাঁর সাহিত্যে বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অত্যন্ত জীবন্ত ও বাস্তবসম্মতভাবে তুলে ধরেছেন। তার লেখা গল্প এবং উপন্যাসগুলিতে সমাজের নানা দিক এবং মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে। তাঁর ভাষা সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল হওয়ায় পাঠকরা তাঁর লেখায় সহজেই আকৃষ্ট হন।
লেখালেখির পাশাপাশি মো. ইকরাম একজন সমাজসেবী হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এবং দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ইকরাম শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে এবং শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন।
তাঁর কৃতিত্বের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, এবং স্বাধীনতা পুরস্কার। তাঁর সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন।
মো. ইকরামের জীবনাবসান হয় ২০০৫ সালের ২৯ এপ্রিল, তবে তাঁর সাহিত্যকর্ম এবং সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে তিনি আজও সবার মধ্যে বেঁচে আছেন। তাঁর লেখা ও জীবনকর্ম আগামী প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।