নিমাই ভট্টাচার্য ছিলেন একজন খ্যাতিমান বাঙালি লেখক, সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক। তার জন্ম ১৯৩১ সালে বাংলাদেশের মাগুরা জেলার শালিখা থানার রামনগর গ্রামে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা তিনি বাংলাদেশের মাগুরা ও যশোর জেলায় সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
নিমাই ভট্টাচার্যের কর্মজীবন শুরু হয় সাংবাদিকতা দিয়ে। তিনি ১৯৫০-এর দশকে কলকাতার বিভিন্ন সংবাদপত্রে সাংবাদিকতা করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি "আনন্দবাজার পত্রিকা" এবং "হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড"-এ কাজ করেছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।
নিমাই ভট্টাচার্যের লেখা প্রথম উপন্যাস 'মেমসাহেব' প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। এই উপন্যাসটি তৎকালীন সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং তা থেকে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়। 'মেমসাহেব' উপন্যাসটি তার সাহিত্যিক জীবনে এক বিশাল মোড় এনে দেয় এবং তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এরপর তিনি একের পর এক জনপ্রিয় উপন্যাস রচনা করতে থাকেন। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে 'রাজধানী এক্সপ্রেস', 'ইনকিলাব', 'ডিটেকটিভ', 'বিবেকানন্দ', 'নকশালবাড়ি' ইত্যাদি। তার রচিত উপন্যাসের সংখ্যা প্রায় ১৫০টিরও বেশি।
নিমাই ভট্টাচার্যের সাহিত্যকর্মে সমাজের নানান সমস্যার চিত্রায়ণ, রোমান্টিকতার ছোঁয়া এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন দেখা যায়। তার রচনাশৈলী পাঠকদের মুগ্ধ করে এবং তার উপন্যাসগুলি সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
কৃতিত্বের দিক থেকে, নিমাই ভট্টাচার্য বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তার সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।
নিমাই ভট্টাচার্য ২০২0 সালের ২৫ জুন কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারায়। তার সাহিত্যকর্ম আজও পাঠকদের মুগ্ধ করে এবং তিনি বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।